মে 9, 2021

প্রথমে গত সপ্তাহের ঘটনাবলির পর্যোলোচনা:

  • ইউরো/ইউএসডি বহুদিন ধরেই একটা বিষয় নিয়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টা হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি কত তাড়াতাড়ি এবং কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু ফেড-এর প্রধান জেরোম পাওয়েল এক সপ্তাহ আগেই এই সাবধান-বাণী শুনিয়েছেন যে, এখনও সবকিছু বেশ নড়বড়ে অবস্থাতেই আছে, এবং মুদ্রাস্ফীতি যে হারে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে তা সাময়িক একটা ব্যাপার মাত্র। স্পষ্টতই তিনি তখনই জানতেন, এবং এখন সেটা প্রত্যেকেই জেনে গিয়েছেন যে, সবকিছু বেশ মসৃণ মনে হলেও আদতে তা মোটেও নয়।
    গত সপ্তাহে একগুচ্ছ ইউএস ম্যাক্রো-ইকোনমিক ইন্ডিকেটর প্রকাশিত হয়েছে, সবগুলোতেই লাল সংকেত দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। প্রস্তুতকরণ ক্ষেত্রে আইএসএম বিজনেস অ্যাক্টিভিটি সূচকের পূর্বাভাস ছিল 65.0, কিন্তু এখন তা মাত্র 60.7 হয়েছে। বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্ম সংস্থানের হার নিয়ে এডিপি রিপোর্টের পূর্বাভাস ছিল আট লক্ষ, কিন্তু এখন তা হয়েছে মাত্র সাত লক্ষ 42 হাজার। পরিষেবা ক্ষেত্রে আইএসএম বিজনেস অ্যাক্টিভিটি সূচকের পূর্বাভাস ছিল 64.3, কিন্তু তা মাত্র 62.7 হয়েছে। এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডিকেটর দেখে এটাকে পুরোপুরি বিপর্যয় বলা যেতে পারে, কেননা কৃষি ক্ষেত্রের (এনএফপি) বাইরে নতুন চাকরির বাজার মার্চে সৃষ্টি হয়েছিল সাত লক্ষ 70 হাজার, এপ্রিলে তা ন’ লক্ষ 78 হাজার হবে বলে আশা করা হয়েছিল, কিন্তু মাত্র দু’ লক্ষ 66 হাজার হয়েছে, যা কিনা পূর্বাভাসের চেটয়ে 3.7 গুণ কম।
    বিনিয়োগকারীদের হাতে অবশ্য মার্কিন অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় বসে থাকার মতো প্রচুর সময় আছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে যাওয়ার সময় এসে গেছে। প্রথমেই যেতে হবে ইউরোপীয় সংঘে। তাছাড়া, ইউরোপে কোভিড-19 প্রতিরোধক টিকা ব্যাপক আকারে দেওয়া হচ্ছে, ইইউ-র সদস্য রাষ্ট্রগুলোও ক্রমশ কোয়ারেন্টিনের বিধি-নিষেধগুলো তুলে নিচ্ছে, সেসব জায়গায় অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। ইউরোজোনে খুরো বিক্রির অবস্থাটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়, সেখানে এই ক্ষেত্রে বেশ বিশ্বাসযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ করা যাচ্ছে। মার্চে এর হার ছিল মাইনাস 1.5%, এপ্রিলে সেটা বেড়ে হয়েছে প্লাস 12.0%। পূর্বাভাস ছিল 9.6% বৃদ্ধি হবে, তার চেয়ে বেশিই হয়েছে।
    উপরের কারণটা ডলারের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে এবং ইউরোপীয় মুদ্রাকে মজবুত করেছে। যার ফলে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ (60%) যা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, তা একশো শতাংশ মিলে গেছে। ইউরো/এইএসডি জুটি ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়ে 07 মে শুক্রবারে সন্ধ্যায় 1.2170 উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছেছে, যা ছ’ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরপর সামান্য পতন হয়ে এই জুটি গিয়ে থেমেছে 1.2165-এ।   
  • জিবিপি/ইউএসডি এই ক্ষেত্রেও পূর্বাভাস পুরোপুরি মিলে গেছে। 10 সপ্তাহ ধরে এই জুটি সাইড চ্যানেল 1.3670-1.4000-এর দিকে যাচ্ছে। বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞই এই মত দিয়েছিলেন যে, এই করিডরের সেন্ট্রাল জোন থেকে কিছুটা নেমে গিয়ে এই জুটি ঊর্ধ্বমুখী হয়ে নিজের উচ্চতর সীমায় গিয়ে পৌঁছবে। ঠিক এমনটাই হয়েছে। সোমবারে এই জুটি শুরু করেছিল 1.3810-এ তারপর শুক্রবার গিয়ে পৌঁছেছে 1.4000 উচ্চতায়, যা কিনা 1.3990 থেকে খুব বেশি দূরে নয়, কাজকর্মের সপ্তাহটা এখানেই শেষ করেছে এই জুটি।
  • ইউএসডি/জেপিওয়াই গত সপ্তাহের পূর্বাভাস দেওয়ার সময় 70 শতাংশ বিশ্লেষক পতনের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তাঁদের মতে, এই জুটি 109.00 প্রান্তের নীচে গিয়ে পড়বে এবং 108.40 লেভেলকে সাপোর্ট বলা হচ্ছিল। ঠিক এমনটাই হয়েছে। এটা ঠিকই যে সোমবারে এক সপ্তাহ আগের সফলতা ধরে রাখার চেষ্টা করেছিল এই জুটির ঊর্ধ্বমুখিনতা, কিন্তু তার শক্তি চট করে ক্ষয়ে গিয়েছিল। এই জুটি পড়ে গিয়ে 07 মে শুক্রবারে স্থানীয় নিম্নসীমা 108.35-এ গিয়ে পড়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত 108.60-এ গিয়ে নেমেছে।
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ারেন বুফের সহকর্মী 97 বছর বয়েসি চার্লস মুঙ্গের বলেছেন, “বিটকয়েন খুবই বাদে এবং এটা সভ্যতার স্বার্থের পরিপন্থী।” তিনি এ-ও বলেন, “বিটকয়েনের সাফল্যকে আমি মোটেও পছন্দ করি না। আমি এই কারেন্সির পক্ষে নেই। এটাকে আচমকাই অকারণে তৈরি করা হয়েছে। এটা অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি করার কারবারে থাকা লোকেদের কাজে আসে।”
    97 বছর বয়েসি এই বিনিয়োগকারীকে এখন শুধু ওয়াল স্ট্রিটের ‘শার্ক’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে না, ‘ডাইনোসর’-ও বলা হচ্ছে। জগৎ সম্পর্কে তাঁদের যা ধ্যান-ধারণা, সেসবের ঊর্ধ্বে চলে গেছে ভার্চুয়াল সম্পত্তি। তাঁরা কারেন্সি ও সিকিউরিটি নিয়ে লেনদেনে অভ্যস্ত, কেননা এগুলোর ভিত হল হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখার মতো বাস্তবতা, এগুলো কাল্পনিক নয়। যাই হোক না কেন, এই ডিজিট্যাল সোনার ঝনঝন শব্দ এই গ্রহের প্রায় প্রত্যেক আর্থিক কেন্দ্রে শোনা যাচ্ছে। আর্থিক তথ্যাদি প্রদান করা সংস্থা এসঅ্যান্ডপি ডাও জোন্স যে সূচক প্রকাশ করেছে, তার ভিত্তি হল বিটকয়েন, ইথেরিয়াম ও এমনই একগুচ্ছ ক্রিপ্টোকারেন্সি। এসঅ্যান্ডপি বিটকয়েন ইন্ডেক্স-এর স্টক সিম্বল (টিকার) হয়েছে এসপিবিটিসি (SPBTC), এসঅ্যান্ডপি ইথেরিয়াম ইন্ডেক্স-এর এসপিইটিএইচ (SPETH) এবং  এই দুই সম্পত্তির গতিবিধির উপর নজর রাখা এসঅ্যান্ডপি ক্রিপ্টো মেগা ক্যাপ ইন্ডেক্স-এর সিম্বল হল এসপিসিএমসি (SPCMC)।
    ক্রিপ্টোকারেন্সিকে শুধুই বিশাল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই গ্রহণ করছে না, সাধারণ মানুষের মধ্যেও এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। আর্থিক পরিষেবা প্রদানের কাজ করা আমেরিকার বিপুলায়তন সংস্থা মাস্টারকার্ড সারা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের 18টি দেশের উপর গবেষণা চালিয়ে একটি ফলাফল প্রকাশ করেছে। তাদের তথ্যাদি মতে, 40 শতাংশ গ্রাহক ঠিক করেছেন যে, আগামী বছর তাঁরা ক্রিপ্টো সম্পত্তির মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করবেন। মিলেনিয়ালদের মধ্যে এই সংখ্যা আরও বেশি। তাঁদের সংখ্যাটা 67 শতাংশ অবধি পৌঁছে যাচ্ছে।
    উপরে যা য়া বলা হল, সেগুলোতে শুধু ডিজিট্যাল কারেন্সিরই লাভ হবে বলে মনে হতে পারে। আসলে কিন্তু তা নয়। বিটকয়েন খুব বেশি করে প্রথাগত বাজারের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে শুরু করেছে। বিটকয়েনের পর অল্টকয়েনও এই ঝাঁকে এসে পড়ছে। এইভাবে ক্রিপ্টোর বাজার এবং সেই সঙ্গে শেয়ার বাজারও প্রচণ্ড ভাবে নির্ভর করে আছে এই বিষয়ের উপর যে হোয়াইট হাউস ও ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ কী কী নীতি গ্রহণ করতে চলেছে। আর্থিক সঞ্জীবনী কর্মসূচি (কিউই)-তে কাটছাঁট করা হলে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে ইন্ধন জোগানো অর্থের স্রোত খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে।  
    সে রকম কিছু না-হওয়া পর্যন্ত মোট ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের ক্যাপিটালাইজেশন মসৃণ বৃদ্ধি প্রকাশ করে চলেছে। এটা 2.110 ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে 2.375 ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত গিয়ে গত সপ্তাহ জুড়ে 12.56% বৃদ্ধি লাভ করেছে। এই একই সময়ে অল্টকয়েন বাজারের ক্যাপিটালাইজেশনও 20 শতাংশেরও বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিটকয়েন তার জমি হারিয়েই চলেছে। 2 জানুয়ারি তারিখে ডমিন্যান্স ইন্ডেক্স ছিল 72.65%। 30 এপ্রিল তারিখে এটা সর্বনিম্ন লেভেলে গিয়ে পড়েছিল, যা 2018-র জুলাইয়ের পর থেকে সবচেয়ে কম। কিন্তু গত সাত দিন ধরে এটা আরও নেমে গিয়ে 44.24%-এ গিয়ে পড়েছে।
    এইসব সংখ্যা দেখে এই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, বহু বিনিয়োগকারীই মূল ক্রিপ্টোকারেন্সির বদলে অল্টকয়েনের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, কেননা এখান থেকে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যাচ্ছে।
    গত সপ্তাহে বিটিসি/ইউএসডি জুটি ফের 60,000 ডলারকে পরীক্ষা করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। অবশ্য এই দু’টোই ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পরে আবার নীচে নেমেছে। এই জুটি 05 মে তারিখে 52,950 ডলার লেভেলে গিয়ে পড়েছে। কিন্তু ডিইএফআই সেক্টরে জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইটিএইচ 2.0-এ ট্রানজিশনের প্রাক্কালে ইথেরিয়াম একের পর এক ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছে। এইভাবে, গত তিন সপ্তাহ ধরে এই কয়েন 80 শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি প্রকাশ করে চলেছে। এর ফলে এই কয়েনের স্রষ্টা 27 বছর বয়েসি ভিটালি বুটেরিন বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ বিলিয়নেয়ার হতে পেরেছে, তিনি ক্রিপ্টোকারেন্সির দৌলতে বিপুল ধন-সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। ফোর্বস-এর মতে, 2020-র শুরুর দিকেই বুটেরিনের সম্পত্তি প্রায় 25 শতাংশ বেড়েছে।
    ইথেরিয়ামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছে লাইটকয়েন। এ বছরের শুরুতে আমরা এই কয়েনের ঊর্ধ্বগামী হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছিলাম। আমাদের যুক্তি ছিল এই যে, বিটকয়েন ইতিমধ্যে নতুন করে সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে, এবং লিটকয়েনের অবস্থা মোটেও এই বিটকয়েনের মতো নয়। লিটকয়েন 2017-র ডিসেম্বরে 371 ডলার পর্যন্ত উঠেছিল, সেখান থেকে লিটকয়েন এখনও অনেক দূরে আছে। অবশেষে, এলটিসি/ইউএসডি জুটি ফের এ সপ্তাহে মানে 07 মে তারিখে শীর্ষে ছিল। যা কিনা গত মাত্র 10 দিনে 75 শতাংশ বৃদ্ধি প্রকাশ করে চলেছে।  

 

বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতামত একত্র করে, কারিগরি ও রৈখিক বিশ্লেষণের বিভিন্ন পদ্ধতির ভিত্তিতে করা পূর্বাভাসের ভিত্তিতে আসন্ন সপ্তাহের পূর্বাভাস হিসাবে আমরা নিম্নলিখিত কথাগুলো বলতে পারি:

  • ইউরো/ইউএসডি বাজারে ফের শেয়ার ক্রেতা ও ডলার বিক্রেতাদের প্রভাব বেশি ছিল। আমরা ইতিমধ্যে উল্লেখ করেছি, অতিমারির সময় ডলার সবার নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠলেও, মুদ্রাস্ফীতি ঊর্ধ্বগামী হওয়ার আশঙ্কায় ডলার দুর্বল হয়ে গেছে, যা 2.4 শতাংশ হারকে পার করে গিয়ে 2013-র পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ সীমায় গিয়ে পৌঁছেছে। বিপুল আর্থিক জোগানের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি বৃদ্ধি পাওয়া উচিত ছিল, যা কিনা শেয়ার বাজার নিয়ে ঝুঁকির মনোভাব বৃদ্ধি করার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণও বৃদ্ধি করত। এসঅ্যান্ডপি500 ও ডাও জোন্স-এর সূচক ফের তাদের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এসঅ্যান্ডপি500 গিয়ে পৌঁছেছে 4.238 লেভেলে এবং ডাও জোন্স পৌঁছেছে 34,732 পয়েন্টে। এই দুয়ের সঙ্গে ইউরো ঊর্ধ্বগামী হয়ে 1.2170 উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছেছে।
    কিন্তু শেয়ার বাজারগুলোর এত দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া এবং ডলার দুর্বল হতে থাকার ফলে ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ হয়তো আরও তাড়াতাড়ি আর্থিক সঞ্জীবনী কর্মসূচিতে কাটছাঁট করার জন্য নড়েচড়ে বসবে। তাই ডালাসের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-এর প্রেসিডেন্ট রবার্ট কাপলানের মতে, আর্থিক বাজারে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ার ফলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফোল্ডিং কিউই-র ইস্যু বাড়াতে পারলে ভাল হয়। মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থা হয়তো চাপে পড়ে যাবে।
    অদূর ভবিষ্যৎ নিয়ে 60 শতাংশ বিশেষজ্ঞের মত এই যে, ডি1 নিয়ে রৈখিক বিশ্লেষণের কথা মাথায় রেখে এটা আশা করা যায় যে, ইউরো/ইউএসডি জুটি 1.2000 এরিয়ার মজবুত সাপোর্টে নিজেদের শুধরে নেবে এবং তাদের ব্রেক-আউটের সময় তারা আরও 100 পয়েন্ট নীচে নেমে যাবে। 1.2055 হল নিকটতম সাপোর্ট। 
    বাকি 40 শতাংশ বিশ্লেষক এইচ4 সংক্রান্ত রৈখিক বিশ্লষণের কথা মাথায় রেখে এই বিশ্বাস করছেন যে, এই জুটির উপরে ওঠা অব্যাহত থাকবে। নিকটতম লক্ষ্যমাত্রা হল 1.2245, যা কিনা ফেব্রুয়ারি মাসের সর্বোচ্চ হার ছিল। এবং পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হল 06 জানুয়ারির উচ্চতায় অর্থাৎ 1.2350-তে পৌঁছনো।
    কারিগরি বিশ্লেষণ অধ্যয়ন করে পাওয়া যাচ্ছে, এই পর্যালোচনা লেখার সময় পর্যন্ত (07 মে, শুক্রবার রাত) এইচ4 ও ডি1 নিয়ে 100 শতাংশ ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর ও 75 শতাংশ অসিলেটর সবুজ সংকেতের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। বাকি 25 শতাংশ অসিলেটরের মতে, এই জুটির মূল্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হবে।
    আসন্ন সপ্তাহের ঘটনাবলির মধ্যে (খুব বেশি ঘটনা নেই অবশ্য) লক্ষণীয় হল, 12 মে বুধবার এবং 14 মে শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপভোক্তা বাজার সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রকাশ করা হবে। জার্মানির উপভোক্তা বাজার সংক্রান্ত তথ্যাদিও 12 মে প্রকাশ পাওয়ার কথা।
  • জিবিপি/ইউএসডি আসন্ন সপ্তাহে এই জুটির অবস্থা গত সপ্তাহের ঠিক উলটো হবে বলে পূর্বাভাস। এক সপ্তাহ আগে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞই মত দিয়েছিলেন যে, এই জুটি 1.3670-1.4000 চ্যানেলের মধ্য অংশ থেকে উঠবে, এখন 70 শতাংশ বিশ্লেষক রৈখিক বিশ্লেষণ করে এই অনুমান করছেন যে, এই জুটি 1.3800 মধ্য অংশে ফিরে আসবে। এরকম যে হতে চলেছে তার কারণ নিশ্চয় এটা যে, 06 মে-র বৈঠকে ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সুদের হার এবং কোয়ান্টিটিভ ইজিং (কিউই) কর্মসূচির আয়তনকে অপরিবর্তিত রাখা হবে।
    এটা ঠিকই যে, নিয়ামক সংস্থা অ্যাসেট বাইব্যাক-এর হার কমিয়ে দিয়েছে এবং অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর হার নিয়ে আশাবাদীও বটে। কিন্তু আউটপুটে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর স্পষ্ট সংকেত পাওয়া না-যাওয়া পর্যন্ত এবং মুদ্রাস্ফীতির হার 2 শতাংশ না-হওয়া পর্যন্ত সুদের হার অপরিবর্তিত রাখা হবে বলে যে-সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার ফলে পাউন্ডের চাহিদা থমকে যাচ্ছে। কিউই-র আয়তনে কাটছাঁট করার পক্ষে রায় দিয়েছেন মাত্র একদিন, এবং তিনি ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডের মুখ্য অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু হ্যালডেন। কিন্তু তাঁর রায়ে বিশেষ কিছু এসে যায় না, কেননা এক মাসের মধ্যেই তিনি অবসর নিতে চলেছেন।
    শুধুমাত্র 30 শতাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে, জিবিপি/ইউএসডি 10 সপ্তদাহের ট্রেডিং রেঞ্জকে ভেঙে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হবে এবং 1.4000 লেভেলের উপর চলে যাবে। এ ক্ষেত্রে এই জুটি 24 ফেব্রুয়ারির উচ্চ মাত্রা 1.4240-তে গিয়ে পৌঁছবে এবং এর এগিয়ে যাওয়ার পথে রেজিস্টেন্স লেভেল হবে 1.4050 ও 1.4180 লেভেল।
    কারিগরি বিশ্লেষণ অধ্যয়ন করে এই জুটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে তা ইউরো/ইউএসডি-র মতোই। এইচ4 ও ডি1 বিষয়ে 100 শতাংশ ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর ও 85 শতাংশ অসিলেটর উত্থানের ইঙ্গিত গিয়েছেন। বাকি 15 শতাংশ অসিলেটর এই সংকেত দিচ্ছেন যে এই জুটির মূল্য প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হবে।
    আসন্ন সপ্তাহের অর্থনীতির ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালে আমার মনে পড়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ রাজা ষষ্ঠ জর্জের প্রতি উৎসর্গীকৃত সিনেমা ‘দ্য কিং’স স্পিচ’-এর কথা। ঠিক এরকমই স্পিচ বা বক্তৃতা দিতে চলেছেন ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডের প্রধান অ্যান্ড্রু বেইলি। তিনি পরপর বেশ কয়েকটি বক্তৃতা দেবেন 11, 12 ও 13 মে তারিখে। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা তাঁর থেকে এমন কিছু শুনতে পাবেন না, যার কিনা কোনও গুরুতর প্রভাব তাঁদের মন-মানসিকতায় পড়তে পারে। তার চেয়েও বেশি আগ্রহ থাকবে ইউকে-র জিডিপি ও উপভোক্তা বাজারের তথ্যাদি নিয়ে। যা কিনা 12 মে বুধবারে প্রকাশ করা হবে।

বিদেশি মুদ্রা বিনিময় ও ক্রিপ্টোকারেন্সির পূর্বাভাস, 10-14 মে 20211

  • ইউএসডি/জেপিওয়াই দু’টি টাইম ফ্রেম নিয়েই সূচক অধ্যয়ন করে যা পাচ্ছে তা বেশ বিশৃঙ্খলই বটে। শুধুমাত্র এইচ4 নিয়ে ট্রেন্ড ইন্ডিকেটররা স্পষ্টতই পতনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন এবং এঁদের মধ্যে 85 শতাংশই লাল সংকেত দিয়ে রেখেছেন। রৈখিক বিশ্লেষণের প্রকাশ, এই জুটির ভোলাটিলিটি ও কনসলিডেশন ক্রমশ হ্রাস পেয়ে 108.35-108.50 জোনে চলে যাবে। কিন্তু 70 শতাংশ বিশ্লেষক একটানা তৃতীয় সপ্তাহেও পতনের পক্ষেই রায় দিচ্ছেন। সাপোর্ট থাকবে 108.40 ও 107.85 লেভেলে এবং 107.45 হল লক্ষ্যমাত্রা।
    বাকি 30 শতাংশ রয়েছেন উত্থানের পক্ষে এবং তাঁদের আশা, এই জুটি 109.00 রেজিস্টেন্সের উপর উঠবে এবং 109.00-109.65 জোনে স্থির হবে।
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি  এই পর্যালোচনার প্রথম পর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বহু বিনিয়োগকারীই এখন মূল ক্রিপ্টোকারেন্সির বদনে মন দিচ্ছেন অল্টকয়েনের বাজারে। বিটিসি/ইউএসডি জুটি এখনও পর্যন্ত 50 দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ভেঙে দিয়ে 60,000 ডলারের উপরে উঠতে পারেনি। কিন্তু এটা কি এই বার্তা বয়ে আনছে যে ক্রিপ্টো বাজারে নতুন করে পতন দেখা দিতে পারে?
    ডমিনো এফেক্টের জন্য বিটকয়েনের যদি পতন হয়, তাহলে অন্যান্য কয়েনও একই রাস্তা ধরবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মূল ক্রিপ্টোকারেন্সির বৃদ্ধি নিয়ে যা আশা করা হচ্ছে তা বাস্তবসম্মতই বটে। এটা ঠিকই যে, এ বছরের শুরু থেকে এর প্রভাবের সূচক 72.65 শতাংশ থেকে কমে 44.24 শতাংশ হয়েছে, কিন্তু এর লেনদেনের পরিমাণ বেশ ভালই। প্রায় 70 বিলিয়ন ডলার। ক্রিপ্টো ফিয়ার অ্যান্ড গ্রিড ইন্ডেক্স ‘গ্রিড’ লেভেল 64 পয়েন্টে পৌঁছলেও প্রয়োজনের তুলনায় এর মূল্য বেড়ে যেতে এখনও অনেক দেরি আছে।
    মধ্যবর্তী সময়কালে বিটকয়েন-ইটিএফ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) স্থগিত রেখেছে বলে তা মূল ক্রিপ্টোকারেন্সির বিরুদ্ধে চলে গেছে। তবু বহু বিশেষজ্ঞই আশাবাদী। তাই প্রখ্যাত ক্রিপ্টো ট্রেডার ও কুশলী মাইকেল ভ্যান ডি পপ বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অত্যন্ত সাহসী অনুমান প্রকাশ করে বলেছেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা এখন উত্থানের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি এবং পতন হবে বলে বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে, বিশেষ করে মার্কিন ডলারের মুদ্রাস্ফীতি দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।”
    ভ্যান ডি পপ আরও বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক অর্থের জোগান যে ভাবে হচ্ছে, তাতে তো বিটকয়েন ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। অর্থাৎ, এখন এর চাহিদা বিশাল কিন্তু জোগান অপেক্ষাকৃত কম। যার ফলে এর দাম বাড়বে।” তিনি আরও বলেন, “বিটকয়েন কি 300,000 বা 500,000 ডলার পাবে? আমার মনে হয় পাবে। সাদামাটা একটা হিসাব করলেই আমরা দেখতে পাব যে বিটকয়েনের সর্বোচ্চ দর 250,000 ডলারের বেশি হবে, এবং তা এক বছরের মধ্যেই 350,000 থেকে 400,000 ডলার পর্যন্ত বাড়বে।” এই বিশেষজ্ঞ এমনও সতর্কতা দিয়েছেন, “আমাদের কিন্তু বহুদিন সাইডওয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।”
    জেপিমর্গ্যান-এর বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামীতে বিটকয়েনের তুলনায় ইথেরিয়াম অনেক বেশি কার্যকর হয়ে উঠবে। তাঁরা এ কথা উল্লেখ করেছেন যে, এই অল্টকয়েন বাহ্যিক ব্যাপারস্যাপারকে অনেক বেশি পরিমাণে প্রতিরোধ করতে পারে। অন্যদিকে বিটকয়েন বাজারের প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ উত্থান-পতনের প্রভাবে পড়ে। যার ফলে সরাসরি এ নিজেকে শুধরে নিতেই থাকে। দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক প্রবণতার ফলে বিটকয়েনে বিনিয়োগকারীরা খুব তাড়াতাড়ি সম্পদ প্রত্যাহার করা শুরু করেছেন।
    জেপিমর্গ্যান-এর বিশ্লেষকদের মতে, “বিটকয়েনের প্রয়োগ খুবই সীমিত। বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এটাকে বেশির ভাগ সময় বিনিয়োগের যোগ্য সম্পদ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সমস্ত নতুন গুরুত্বপূর্ণ প্রোজেক্ট তৈরি হচ্ছে ইথেরিয়ামের উপর ভিত্তি করে। এর লিকুইডিটি বেশি। ইথেরিয়াম সম্প্রতি স্পট মার্কেটেও নিজের অবস্থান বেশ ভাল ভাবেই মজবুত করেছে।“ বিশেষজ্ঞরা এ কথাও উল্লেখ করেছেন, “এই ইথেরিয়ামের আরও একটা বড় সুবিধা এই যে এর ইকোসিস্টেম অনেক বড় ও উন্নত।”

 

নর্ড এফএক্স অ্যানালিটিক্যাল গ্রুপ

 

 

সতর্কীকরণ: এখানে যা বলা হয়েছে তা বিনিয়োগ সংক্রান্ত পরামর্শ নয় বা আর্থিক বাজারে কাজ-কর্মের কোনও পথ-নির্দেশ নয়। এসব কথার উদ্দেশ্য শুধু তথ্যের যোগান দেওয়া। আর্থিক বাজারে লেনদেন করাটা বেশ ঝুঁকির ব্যাপার এবং এখানে জমা করা পুরো টাকাই জলে চলে যেতে পারে।  


« বাজার বিশ্লেষণ ও সংবাদ
প্রশিক্ষণ
গ্রহণ করুন
মার্কেটে নতুন? ব্যবহার করুন “শুরু করা যাক” বিভাগটি।
প্রশিক্ষণ শুরু করুন
আমাদের অনুসরণ করুন (সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিতে)