মার্চ 28, 2021

প্রথমে গত সপ্তাহের ঘটনাবলির পর্যালোচনা:

  • ইউরো/মার্কিন ডলার. কোভিড-19 অতিমারি শুরু হওয়ার পর থেকেই ডলারের স্থিতি সময়ে-সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য কখনও এটা নিরাপদ মুদ্রা হয়ে উঠেছে, কখনও আবার বিপজ্জনক সম্পদ হয়ে উঠেছে। যেমন, 2020-র নভেম্বর-ডিসেম্বরে শেয়ার বাজার উঠতে থাকার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই মুদ্রার পতন হয়েছিল। জানুয়ারি থেকে ডলার এসঅ্যান্ডপি500 সহ উঠতে শুরু করেছিল। এখন এই সূচক নিজের ক্ষেত্রে সর্বকালের সর্বোচ্চ স্থানে গিয়ে পৌঁছে হয়েছে 3.795। ডিএক্সওয়াই ডলারের সূচকও বছরের সর্বোচ্চ স্থানে গিয়ে পৌঁছে হয়েছে 92.72।
    করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া পরিস্থিতি এবং তাকে সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন সরকার যেমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল, মূলত সে-সবের ফলেই মার্কিন ডলারে এমন অস্থিরতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। তার উপর গত সপ্তাহে ফেড আরেকটা ধন্দ সৃষ্টি করেছে। এই কথা মাথায় রাখলে একটা কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ওপেন মার্কেট কমিটি (এফওএমসি)-র বৈঠকের পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল রিজার্ভ অন্তত 2023-এর আগে সুদের হার বাড়াবে না। কোয়ান্টিটিভ ইজিং (কিউই)-র অন্যান্য মানদণ্ডকেও ফেড বদলাবে না। ফেড-এর মতে, এক লক্ষ ন’ হাজার কোটি ডলারের নতুন যে-প্যাকেজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষর করেছেন, তা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট।
    মাত্র কয়েক দিন আগে, ফেড-এর চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল ঘোষণা করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যে-মুহূর্তে সম্পূর্ণ ঘুরে দাঁড়াবে, সেই মুহূর্ত থেকেই নিয়ামক সংস্থা ফেড ধীরে-ধীরে মাসিক সম্পদ ক্রয়ের ক্ষেত্রে 12 হাজার কোটি ডলার খরচ করা বন্ধ করে দেবে। ফেড-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, এটা এই গ্রীষ্মের মরসুমেই হয়ে যেতে পারে।
    তাহলে এর ফলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে কিউই-কে গুটিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সরকার ও সেনেট তর্ক-আলোচনা শুরু করতে পারে। কিন্তু এমন তথ্যও পাওয়া গেছে যে, আরও তিন লক্ষ কোটি ডলারের আর্থিক সঞ্জীবনীর আরও এক নতুন প্যাকেজ নিয়ে বাইডেন প্রশাসন ইদানীং আলোচনা করছে। সেটার তাহলে কী হবে?
    বাজার এই মুহূর্তে জেরোম পাওয়ালের দিকে আছে। এখন ডলারও নিজের অবস্থান মজবুত করে চলেছে। গরিষ্ঠ সংখ্যক বিশ্লেষক (65%) মূল যে পূর্বাভাসের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন, সেটার অনুমান মতোই ইউরো/মার্কিন ডলারের পতন হয়েছিল, 1.1825-এ থাকা 200 দিনের এসএমএ সাপোর্ট পার করে 1.1760-এ গিয়ে পড়েছে। এর পর একটু উপরে উঠে 1.1790-তে গিয়ে শেষ করেছে;
  • জিবিপি/মার্কিন ডলার. দু’সপ্তাহ ধরে সাইডওয়ে চ্যানেল 1.3775-1.4000-তে থাকার পর, ব্যাপক হারে মজবুত হতে থাকা ডলার এই জুটিকে টেনে নামিয়ে দিয়েছে। 55 শতাংশ বিশেষজ্ঞ পতন হবে বলে রায় দিয়েছিলেন, এবং তাঁদের কথাই ঠিক হল। 25 মার্চ বৃহস্পতিবারে জিবিপি/মার্কিন ডলারের জুটি স্থানীয় ভাবে নিচুতে নেমে 1.3670-তে পৌঁছেছে। এরপর এটা সাইড চ্যানেলের নিম্ন সীমায় ফিরে যেতে সেটা সাপোর্ট থেকে রেজিস্ট্যান্স হয়ে উঠেছে। সপ্তাহ শেষে কী হবে তা এর থেকেই আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল। সেটা গিয়ে পৌঁছল 1.3790-তে;
  • জিবিপি/মার্কিন ডলার. এই জুটির যখন পতন হচ্ছিল তখন বড়সড় আকারে কোনও উত্থান হয়নি। মাত্র 50 পয়েন্টই এই জুটির পক্ষে যথেষ্ট ছিল। এই জুটি 1.08.40 পর্যন্ত পড়ে গিয়ে কিছুটা উঠেছিল ডলার মজবুত হওয়ার পর। উত্থানের নিকটতম লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল 110.00 উচ্চতায়, সেখান পর্যন্ত এই জুটি পৌঁছেছিল। সপ্তাহের সর্বোচ্চ উত্থান ছিল 109.85। এরপর এটা সামান্য পড়ে গিয়ে সপ্তাহের শেষ দিনে এর পয়েন্ট ছিল 109.67;
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি. গরিষ্ঠ সংখ্যক বিশেষজ্ঞ গত সপ্তাহের যে-পূর্বাভাসের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন, তা উত্থানের ব্যাপারে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ছিল না। পূর্বাভাস ছিল, বৃদ্ধি ব্যাহত হবে, ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহে বিটকয়েনের নিম্নতর সীমা ভেঙে যাবে এবং এর পার্শ্বীয় গতিবিধি থাকবে $50,000-60,000 মাত্রায়। বিনিয়োগকারীদের দুর্ভাগ্য, ঠিক এসব-ই হয়েছে। 20 মার্চে বিটকয়েন/মার্কিন ডলার জুটি $60,000 উচ্চতায় ছিল, কিন্তু এটা 25 মার্চ, বৃহস্পতিবারে স্থানীয় ভাবে নিচুতে প্রায় $50,000-এ ছিল। বিটকয়েনের পতন 16 শতাংশে থাকার সময় শীর্ষস্থানীয় কয়েকটা অল্টকয়েনের দাম প্রায় 25 শতাংশ কমে গিয়েছিল।
    সামান্য যে-ক’টা লাভের মুখ দেখেছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল রিপল। সাতদিন আগে এটা $0,5450 থেকে শুরু করেছিল, 22 মার্চে $0,5955 পর্যন্ত উঠেছিল এবং 26 মার্চ, শুক্রবারের সন্ধ্যা পর্যন্ত এর লেনদেন হয়েছিল $0,5450-তে।
    আমাদের অনুমান অনুযায়ী, সাধারণ ভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারের চাহিদা ভালই বাড়ত। কিন্তু ইলন মাস্কের কথাতেও শেষ রক্ষা হল না। তিনি বলেছিলেন, বিটকয়েন দিয়েই টেসলা গাড়ি কেনা যাবে, এর জন্য বিটকয়েনকে ডলারে ভাঙাতে হবে না। এ ধরনের কথায় এই সেদিন পর্যন্তও বাজারে উত্থান লক্ষ করা যেত, কিন্তু এখন এসব কথায় বাজার ওঠার মতো খুবই স্বল্প-মেয়াদি একটা ধাক্কা দেখতে পাওয়া গেছে।
    স্কাইব্রিজ ক্যাপিট্যাল-এর সিইও এবং হোয়াইট হাউজ কমিউনিকেশন্স-এর ডাইরেক্টর অ্যান্টনি স্কারামুচির মতে, এই মুহূর্তে বিটকয়েনে প্রায় দেড়শো কোটি ডলার আছে টেসলার। ইলন মাস্ক নিজে টেসলা, স্পেসএক্স-এর মাধ্যমে মোট পাঁচশো কোটি ডলারের বিটকয়েনের মালিক। কিন্তু এসব এখন আর যথেষ্ট নয়। বিটকয়েনকে বাজারে যদি আরও গতিশীল হতে হয়, তাহলে টেসলা বা মাইক্রোস্ট্র্যাটেজি-র চেয়েও বেশি শক্তিশালী মাধ্যমের প্রয়োজন হবে তার।
    কিন্তু মার্কিন ফেডারেল-এর মতো নিয়ামক সংস্থাগুলো অল্প-স্বল্প যা সব কথা বলেছে, তাতে এর বাজার আরও নামার পক্ষে যথেষ্ট। সঞ্চয় ও জিনিসপত্র কেনাবেচার কেনার ব্যাপারে প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সির যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম-এর প্রধান জেরোম পাওয়েল। ব্যাঙ্ক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্ট-এর ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে তিনি নিজের বক্তৃতায় ডিজিট্যাল সম্পদের অস্থির পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এই অস্থিরতার জন্যই এগুলোকে সঞ্চয় করার মানেই হয় না। পাওয়েল বলেছেন, “এগুলোর পিছনে শক্তপোক্ত কোনও ভিত নেই। এগুলোকে বেশি করে শুধু অনুমান করার কাজে ব্যবহার করা হয়। তাই বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে এগুলো ঠিক জনপ্রিয় নয়। ক্রিপ্টো সম্পদগুলো ডলারের বদলে হয়তো সোনার স্থান দখল করতে পারে। এই যা।”
    এসঅ্যান্ডপি500-এর পতনের ফলে স্পষ্টতই বিটকয়েন/মার্কিন ডলারের পতন হয়েছিল। তাই এই ধরনের বিপজ্জনক সম্পদকে আরও বেশি করে ‘ডিজিট্যাল সোনা’ বলা যেতেই পারে। গত কয়েক দিনে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রায় 240,000 স্থান পর্যন্ত পৌঁছেছেন, এবং মূলধনের হিসাবে ক্রিপ্টো বাজারের মোট পরিমাণ এক লক্ষ 80 হাজার পাঁচ কোটি ডলার থেকে কমে এক লক্ষ 68 হাজার কোটি ডলার হয়ে গেছে। এ সপ্তাহে ক্রিপ্টো ফিয়ার অ্যান্ড গ্রিড ইন্ডেক্স 71 থেকে সরে গিয়ে সেনট্রাল জোন-এ চলে গিয়ে এখন আছে 54-তে, যা উত্থানও নয় এবং পতনও নয়। অবশ্য এটা হয়তো ঝড়ের আগের থমথমে পরিবেশ হতে পারে।

 

বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতামতকে একত্রিত করে, সেই সঙ্গে কারিগরি ও রৈখিক বিশ্লেষণের বেশ কয়েকটি পদ্ধতির ভিত্তিতে করা পূর্বাভাসের ভিত্তিতে আসন্ন সপ্তাহের পূর্বাভাস হিসাবে আমরা নিম্নলিখিত কথাগুলো বলতে পারি:

  • ইউরো/মার্কিন ডলার. আমেরিকার মুদ্রার পক্ষে তিনটি বিষয় কাজ করছে। প্রথমটা হল, এখানকার নাগরিকদের সাফল্যের সঙ্গে টিকা দেওয়া। এর থেকে যা সুফল পাওয়ার তা তো পাওয়াই গেছে, সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা-ও পূরণ হয়েছে। তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল, হোয়াইট হাউসে তাঁর পদার্পণের পর প্রথম 100 দিনের মধ্যেই 20 কোটি মার্কিন নাগরিককে টিকা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় কারণটি হল, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে সরকারি ঋণপত্র ক্রমশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। তৃতীয় কারণটি হল মার্কিন অর্থনীতির মজবুত অবস্থা। যা কিনা নিজেকে সহ অন্যান্য বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করবে।
    ইউরোপে এই ধরনের কোনও ইতিবাচক দিক দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। ইসিবি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট লুইস ডি গিন্দোস বলেছিলেন যে, গ্রীষ্মের মরসুমের মধ্যে ইউরোজোন-এ যদি টিকাকরণ কর্মসূচির ব্যাপক বৃদ্ধি হয়, তাহলে তৃতীয় ও চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ইউরোপে ব্যাপক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি লক্ষ করা যাবে। কিন্তু এসব শুধু কথার কথা।
    এই মুহূর্তে 70 শতাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ডলার ক্রমশ মজবুত হতে থাকবে এবং ইউরো/মার্কিন ডলার জুটি 1.1640-1.1700 জোন-এ গিয়ে পড়বে। 2020-র সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে যতটা নীচে ছিল, ততটা নীচে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। যা কিনা প্রায় 1.1600। এই পূর্বাভাসকে সমর্থন করছে এইচ4-এর 85 শতাংশ এবং ডি1-এর 100 শতাংশ ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর, এবং সেই সঙ্গে ডি1-এর 75 শতাংশ অসিলেটর। বাকি 25 শতাংশের ইঙ্গিত, এই জুটি প্রথমে কম দামে বিক্রি হলেও পরে এর দাম উঠবে।
    রৈখিক বিশ্লেষণ লক্ষ করলে এই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, দু’টো সময়সীমার মধ্যেই আসন্ন দিনগুলোতে ইউরো 1.1880 পর্যন্ত মজবুত হতে পারে, এবং তারপর এই জুটির দাম পড়তে থাকবে।
    উল্লেখ্য, সাপ্তাহিক পূর্বাভাস থেকে মাসিক পূর্বাভাসের দিকে এসে তাকালে লক্ষ করা যাবে যে, 60 শতাংশ বিশ্লেষক-ই ইউরো/মার্কিন ডলার জুটির উত্থানের পক্ষে রায় দিয়েছেন। এখানে লক্ষ্যমাত্রা হল 1.2000 ও 1.2200।
    30 মার্চে জার্মানিতে এবং 31 মার্চে ইউরোজেন-এ উপভোক্তা বাজার সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রকাশ করা হবে। আসন্ন সপ্তাহের ঘটনাবলির মধ্যে এই দু’টিকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার পাশাপাশি দেখতে হবে 31 মার্চ, বুধবারে (এডিপি প্রতিবেদন) ও 2 এপ্রিল, শুক্রবার (এনএফপি) মার্কিন শ্রম বাজার নিয়ে কী তথ্যাদি প্রকাশ করে। 31 মার্চে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কী বক্তৃতা দেন, সেটা নিয়েও আগ্রহ রয়েছে। বাজার এই অপেক্ষায় রয়েছে যে, দেশের অর্থনীতিকে দ্রুত পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তাঁর প্রশাসন কী-কী পদক্ষেপ করবে, সে-সম্পর্কে তাঁর বক্তৃতায় কোনও সংকেত পাওয়া যায় কি না।;

বিদেশি মুদ্রা বিনিময় ও ক্রিপ্টোকারেন্সির পূর্বাভাস, 29 মার্চ-02 এপ্রিল, 20211

  • জিবিপি/মার্কিন ডলার. মার্চের শেষ দিনে মানে বুধবারে আমরা জানতে পারব, 2020-র চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ইউকে-র জিডিপি কত ছিল। পূর্বাভাস বলছে, ইন্ডিকেটর তার পূর্ববর্তী স্তর 1 শতাংশেই থাকবে। এতে বিনিয়োগকারীরা কোনও আশার আলো দেখতে পাবেন বলে মনে হয় না, কিন্তু এটা তাঁদের একেবারে হতাশও করবে না। তাই তাঁদের মধ্যে 50 শতাংশই সাইডওয়েজ ট্রেন্ডের পক্ষে রায় দিয়েছেন, 40 শতাংশের মতে ডলার মজবুত হবে এবং মাত্র 10 শতাংশ বলছেন ব্রিটিশ পাউন্ড মজবুত হওয়ার কথা। কারিগরি বিশ্লেষণ যা বলছে, তা হল: 50 শতাংশ অসিলেটর উত্থানের কথা বলছেন এবং 50 শতাংশ বলছেন পতনের কথা। ট্রেন্ড ইন্ডিকেটরেও একই ধরন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ডি1-এ দাম কমার প্রবণতাই বেশি। 65 শতাংশ অসিলেটর ও 70 শতাংশ ট্রেন্ড ইন্ডিকেটরে দাম কমার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
    নিকটতম সাপোর্ট লেভেলগুলো হল 1.3760, 1.3700, 1.3670 এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো হল 1.3820, 1.3900, 1.3960। টার্গটগুলো ক্রমে 1.4000 ও 1.3600;
  • মার্কিন ডলার/জেপিওয়াই. গত সপ্তাহে এই জুটি 109.85-এ উঠেছে। যা কিনা গত ন’মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত তিন মাস ধরে এই জুটি প্রায় 730 পয়েন্ট পর্যন্ত ব্যাপক বৃদ্ধি প্রদর্শন করে যাচ্ছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, ইয়েন-এর মতো চিরাচরিত নিরাপদ মুদ্রা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ ইদানীং কম।
    বাজারের প্রবণতায় টানকান সূচক বড়সড় কোনও প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। ব্যাঙ্ক অব জাপান-এর পক্ষ থেকে প্রকাশিত এই সূচকে বিশাল প্রস্তুতকারক শিল্পের সাধারণ ব্যাবসার অবস্থা প্রতিফলিত হয়। টানকান হল জাপানের অর্থনীতির একটি সূচক, যা প্রচণ্ড ভাবে রপ্তানীমুখী শিল্পের উপর নির্ভরশীল। সূচক মূল্য শূন্যের উপরে থাকা মানে সেটা ইয়েন-এর পক্ষে ইতিবাচক, অন্যাদিকে শূন্যের নীচে থাকা মানে তা নেতিবাচক। অবশ্য পূর্বাভাস বলছে, 1 এপ্রিল, বৃহস্পতিবারে যে-সূচক মান প্রকাশ করা হবে, তা শূন্যের থেকে বেশি বা শূন্যের চেয়ে কম থাকবে না, বরং তা শূন্যের সমান থাকবে। এটা হল নিরপেক্ষ মান। যদিও এই মান কোনও ভাবে হয়তো জাপানি মুদ্রার সহায়ক-ই হবে, কেননা এক ত্রৈমাসিক আগেই টানকান 10-এর নীচে ছিল। কিন্তু মার্কিন ডলার/জেপিওয়াই জুটি নিরপেক্ষ মানে থাকলে পতনের হাত থেকে খুব সামান্যই রক্ষা পাবে।
    সামগ্রিক ভাবে, বেশির ভাগ বিশ্লেষক (60%) পতনের কথাই বলছেন। তাঁদের মতে, এই জুটি 110.00 প্রান্তের উপরে গিয়ে থামবে। লক্ষ্যমাত্রা হল 111.70 ও 112.20। 100 শতাংশ ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর ও 75 শতাংশ অসিলেটর এ ব্যাপারে সহমত। বাকি 25 শতাংশ এই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এই জুটি বেশি দামে বিক্রি হলেও পরে এর দাম কমতে পারে।
    বাকি 40 শতাংশ বিশেষজ্ঞ রৈখিক বিশ্লেষণর ভিত্তিতে এই আশা করছেন যে, পতন থামবে বলে দীর্ঘ দিন ধরে যে প্রতীক্ষা করা হচ্ছিল, তার অবসান হবে। এরই পাশাপাশি সাপ্তাহিক পূর্বাভাস থেকে সরে এসে মাসিক পূর্বাভাসের দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যাবে যে, তাদের সংখ্যা 75 শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এই জুটির পতনে সাপোর্ট লেভেল হল 109..00, 108.60, 108.40, 106.65। লক্ষ্যমাত্রা হল 106.00 জোন;
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি. একটা ব্যাপার লক্ষ করা গিয়েছিল যে বসন্ত ঋতুতে শুধু গাছপালাই বেড়ে ওঠে না, সেই সঙ্গে বিটকয়েনের কোট-ও বেড়ে যায়। গত তিন বছর ধরে এপ্রিল মাসে বিটকয়েন/মার্কিন ডলার জুটি গড়ে 40 শতাংশ হারে বেড়েছে। তার মানে, এ বছর এপ্রিলের শেষের দিকে এটা $70,000-75,000’এর মধ্যে থাকবে। 30 এপ্রিলে শেষ হওয়া কল অপশন অনুরূপ প্রত্যাশা প্রকাশ করছে। সেগুলো এখন মোট $240,000,000-এর ডেরিভেটিভ এক্সচেঞ্জে $80,000 দামে খুলছে। মূল ক্রিপ্টোকারেন্সিতে নতুন করে বৃদ্ধির চক্র শুরু হতে পারে মনে করে কোল্ড ওয়ালেটে একে সক্রিয় ভাবে প্রত্যাহার করা হয়েই চলেছে।
    মার্কিন অর্থনীতিতে এক লক্ষ 90 হাজার কোটি ডলারের সহায়ক প্যাকেজের কথা আমরা ইতিমধ্যে একাধিক বার উল্লেখ করেছি। মিজুহো সিকিউরিটিজ-এর মতে, এর মধ্য থেকে মার্কিন নাগরিকরা দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি ডলার খরচ করতে পারবেন ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার জন্য। কোভিড-রোধক এই প্যাকেজের পর তিন হাজার কোটি টাকার প্যাকেজেরও সম্ভাবনা রয়েছে। এটাও যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ক্রিপ্টো বাজারেরই লাভ হবে। কিন্তু এসবই ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা মাত্র। এদিকে 60 শতাংশ বিশ্লেষক মনে করছেন, আগামী এক-দুই সপ্তাহ বিটকয়েন/মার্কিন ডলার জুটি $50,000 পিভট পয়েন্ট ধরে এগিয়ে যাবে, $46,500-56,000’এর মধ্যে উত্থান-পতন হবে।
    বিটিসিসি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন সিইও ববি লি-র কথা অনুযায়ী আমরা এই দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে পারি যে, বিটকয়েন-এর দাম $300,000 পর্যন্ত উঠতে পারে, তারপর দীর্ঘদিন ধরে এর পতন অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেছেন, “চার বছর অন্তর বিটকয়েন-এর বাজারে উত্থান দেখতে পাওয়া যায়, এবং বর্তমানে বেশ বড়সড় উত্থান দেখতে পাওয়া যাবে। আমার মনে হয়, এই গ্রীষ্মে বিটকয়েন-এর দাম $100,000 পর্যন্ত উঠতে পারে।” কিন্তু এই দাম সর্বকালের সেরা উত্থান $300,000 পর্যন্ত পৌঁছনোর পর সামান্য দাম কমলেই তা হুড়হুড় করে নামতে থাকবে। লি-র মতে, ক্রিপ্টোর এই ঠান্ডা অবস্থা দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত থাকবে। তিনি এ-ও বলেছেন, “ঐতিহাসিক উত্থানের পর বিটকয়েন-এর দাম 80-90 শতাংশ পর্যন্ত পড়ে যেতে পারে। এর জন্য বিনিয়োগকারীদের তৈরি থাকতে হবে।”
    এই পর্যোলোচনার উপসংহারে আমরা আমাদের অণু-শিরোনাম “ক্রিপ্টো লাইফ হ্যাকস”-এ পরবর্তী “মিরাকল ডিভাইস”-এর কথা বলব। ওয়াইজমাইনিং সম্প্রতি স্যাটো এএসআইসি মাইনার বয়লার বাজারে এনেছে। এর সাহায্যে বিটকয়েন মাইন করেই জল গরম করা যায়। এই বয়লারের ইন্টারমিডিয়েট কুল্যান্টটি হল একটি বিশেষ ডাই-ইলেকট্রিক কুল্যান্ট। এএসআইসি কুলিং ইউনিটে তরল পদার্থ ফুটতে-ফুটতে ভাপ হয়ে যায়, এই ভাপ ট্যাঙ্ক কয়েল পর্যন্ত উঠে গিয়ে জমা হয় এবং জলতে তাপ দিতে থাকে। জমা হওয়া সেই ভাপ ফের মাইনার-এর কুলিং ইউনিটে ফিরে আসে। এটা যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁরা এমন ব্যবস্থা রেখেছেন যে, এই ওয়াটার হিটার-কে ঘরের মেন হিটিং সিস্টম-এর সঙ্গে কানেক্ট করা যায়। এই এপ্রিল থেকেই স্যাটো বিক্রি শুরু হয়ে যাবে।
    অপরাধ জগৎ থেকে আরও একটা “লাইফ হ্যাক”-এর কথা এখানে উল্লেখ করা হল। বিশ্লেষক কোম্পানি এলিপ্টিক-এর নতুন এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বৃহত্তম ডার্কনেট মিডিয়া হাইড্রা-র কাছে এমন এক নতুন উপায় আছে, যেটাকে কাজে লাগিয়ে সরকার-প্রচলিত মুদ্রা দিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিময় করা যায়। মুদ্রার সঙ্গে ভ্যাকুয়াম-প্যাকড ট্রেজার ঢুকিয়ে দেওয়া থাকে 5-20 সেন্টিমিটার আন্ডারগ্রাউন্ডে, এবং ক্রেতার সঙ্গে উপযুক্ত জিপিএস কো-অর্ডিনেট কমিউনিকেট করা থাকে। এই একই পদ্ধতি বহু আগেই ড্রাগের মতো বে-আইনি জিনিস বিক্রির কাজে ব্যবহার করা হত। কিন্তু এটাতে বেশ ঝুঁকিও আছে। কেননা দুর্বৃত্তরা কখনও-কখনও গ্রাহকদের ট্র্যাক করে ‘পারসেল’ নিয়ে চলে যায়। এর পরিণাম যে কী হবে আগে থেকে জানা যায় না।  

 

নর্ড এফএক্স অ্যানালিটিক্যাল গ্রুপ

 

সতর্কীকরণ: এখানে যা বলা হয়েছে তা বিনিয়োগ সংক্রান্ত পরামর্শ নয় বা আর্থিক বাজারে কাজ-কর্মের কোনও পথ-নির্দেশ নয়। এসব কথার উদ্দেশ্য শুধু তথ্যের যোগান দেওয়া। আর্থিক বাজারে লেনদেন করাটা বেশ ঝুঁকির ব্যাপার এবং এখানে জমা করা পুরো টাকাই জলে চলে যেতে পারে।


« বাজার বিশ্লেষণ ও সংবাদ
প্রশিক্ষণ
গ্রহণ করুন
মার্কেটে নতুন? ব্যবহার করুন “শুরু করা যাক” বিভাগটি।
প্রশিক্ষণ শুরু করুন
আমাদের অনুসরণ করুন (সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিতে)